প্রাণী প্রেমের নামে আমাদের হত্যা করা হয়েছে - মলি (২০১৭ - ১১ জুন, ২০২০)

ছবি
গত মে মাসে (২০২০) এর শেষের দিক থেকে কি মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে, এবং এখনও হচ্ছে... ফেব্রুয়ারি মাসে আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। সেই সময়ই আমাদের বাসায় যিনি কাজ করতেন, তার ছেলের একটি সমস্যার কারণে তাকে দেশে যেতে হয়। এরপর লকডাউন এর কারণে তিনি আর ফিরে আসতে পারছিলেন না। আমার মা সিবিজি রুগী। আমার বড় বোন লন্ডনে থাকেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই অবস্থায় মা আমার খালার বাসায় থাকলেই ভালো হয়।   আমার দুটি পোষা বেড়ালের মধ্যে হুলো এবং অপরটির নাম ছিলো মলি। একা বাসায়  অসুস্থ অবস্থায় আমি ওদের দেখাশোনা করতে পারছিলাম না। করনা কালীন একা বাড়িতে অসুস্থা অবস্থায় আমার প্রচন্ড প্যানিক ও হচ্ছিলো। আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে আমাদের বাসায় যিনি কাজ করতেন, তিনি আর জীবিত ফিরে আসবেন না। রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে, দুর্ভিক্ষ হবে, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে, মানুষ তখন ঘরে ঘরে ধুকে ডাকাতি করবে। এমন একটা ধারণা অনেকেরই হয়েছিলো। প্যানিক থেকে প্রায় আমার নাক থেকে রক্ত পড়ত। দুশ্চিন্তা থেকে পেটে ব্যথা প্রচন্ড বেড়ে গিয়েছিলো। বেশী টেনশান হতো হুলো মলিকে নিয়ে। আমি ওদের ঠিক মতন দেখাশোনা করতে পারছিলাম না, ওরা যদ

শকুন এবং শিশুটির ছবির পশ্চাতের কাহিনী । The Vulture And The little Girl

Creative Commons License This work is licensed under a Creative Commons Attribution 2.0 Generic License.
Photo:Sudane Famine - Cliff/Flickr/CC BY 2.0,  
Original title: Struggling Girl

শকুনটি অপেক্ষা করছিল কখন মেয়েটা মারা যাবে আর সে তার মাংস গলধারন করবে। ছবিটি তুলেছিল দক্ষিন আফ্রিকার ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার। উনি তখন সুদানে অবস্হান করছিল তার উপর আরোপিত কর্তব্য সম্পাদন করতে।

১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে কেভিন সুদান গমন করে। সেই সময় সুদানে চলছিল দূর্ভিক্ষের মহা তান্ডব লীলা। সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল জাতিসংঘ। প্লেন থেকে খাদ্য নিক্ষেপ করে বিলি করছিল ক্ষুধার্ত মানুষের মাঝে। খোলা হয়েছিল খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অতি অপ্রতুল। জীর্ণ, শীর্ণ, ক্লান্ত দূর্ভিক্ষ প্রপীড়িত মানুষ গুলি সেই খাদ্য পাওয়ার প্রতিযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে করুন পরাজয়ের শিকার হয়ে প্রতি ঘন্টায় প্রায় বিশ জন করে ঢলে পড়ছিল মৃত্যুর কোলে। বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের একা রেখে ছুটছিল নিক্ষিপ্ত খাদ্যের পেছনে।

এমন একটি দূঃসময়ে কেভিন কার্টার সুদানের এডওয়ার্ড গ্রামে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি খাদ্য বিতরন কেন্দ্রের পাশে দেখতে পেল জীর্ণ, শীর্ন, মৃতপ্রায় একটি মেয়েকে। মেয়েটি কেন্দ্র থেকে খাদ্য আহরণে ব্যর্থ হয়ে ক্ষনিকের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছিল নিথর হয়ে। এমন সময় তার পেছনে উড়ে এসে বসল একটি গোগ্রাসী শকুন।

এমন দৃশ্যের ছবি ধারন করার সুযোগ কেভিন হেলায় নষ্ট করতে চাইল না। খুব আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল কাছে যাতে ভয় পেয়ে শকুনটা উড়ে না যায়। তারপর প্রায় ২০ মিনিট ক্যামেরা উঁচিয়ে অপেক্ষা করে রইল শকুনটিকে মেয়েটির আরও কাছে আসার জন্যে, সবচেয়ে দূর্লভ মুহূর্তটিকে ধারন করার জন্যে।

অবশেষে সেই মুহূর্তটা এল।

দূর্লভ সেই মুহূর্তটাকে ক্যামেরা বন্দী করে আরো কয়েকটি ছবি তুলল কেভিন। তারপর শকুনটাকে তাঁরিয়ে দিল।

সেই ক্ষণে কেভিন বুঝতেই পারেনি যে ঐ মুহূর্তে ফটোজারনালিসমের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ছবিটি সে তার ক্যামেরায় ধারন করেছে।

ফটোটা নিওইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বিক্রি হয় এবং ১৯৯৩ সালের ২৬শে মার্চ প্রকাশিত হয়। রাতারাতি শত শত লোক পত্রিকা অফিসে ফোন করে জানতে চায় মেয়েটির কি হলো পরে। ঝড় উঠল সমালোচনার।

চাপের মুখে নিউওয়র্ক টাইমস এর মত একটা স্বনামধন্য পত্রিকাও একটি বিশেষ সম্পাদকীয় লিখতে বাধ্য হয়। সম্পাদকীয়তে জানানো হয় যে তখনো বাচ্চাটার শকুনের ছোবল থেকে নিজেকে দূরে টেনে নিয়ে যাবার মত যথেষ্ট শক্তি ছিল।

তবে তার শেষ পরিণতি কি হয় কেউ বলতে পারেনা।

অধিকাংশ এমন নাটকীয় ছবির মতই, এই ছবিকে কেন্দ্র করে কার্টারকে মুখোমুখি হতে হয় সহস্র প্রশ্নবানে। মানুষ প্রশ্ন তোলেন কেন কার্টার মেয়েটিকে সময় মত বাঁচাবার চেষ্টা না করে ব্যস্ত ছিল ছবি তোলার কাজে। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইমস লিখেছে - ক্যামেরার লেন্স সামজ্ঞস্যরত মানুষটি ছিল আরো বড় একটা খাদক জন্তু। কার্টার নিজেও ভুগতে শুরু করে অপরাধবোধ থেকে। কেন সে শকুনটাকে সরিয়ে দুর্বল মেয়েটাকে সাহায্য করল না।

তবে তখন
রোগ জীবানু ছড়ানোর আশংকায় সবার উপর নির্দেশ ছিল দূর্ভিক্ষাক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে স্পর্শ না করার। কিন্তু জনতার মতবাদ, তিরষ্কার, সমালোচনা, এবং আত্মদহন কার্টারকে নিমজ্জিত করে গহীন বিষন্নতায়।

এই ছবির আগেও তাকে এরকম আরো অনেক মর্মান্তিক দৃশ্যকে নিস্পলক ক্যামেরাবন্দি করতে হয়েছিল। ছবি তুলতে হয়েছিল ১৯৮০ সালের দক্ষিন আফ্রিকার বিভৎস বন্দুক যুদ্ধের। একজন ফটোসাংবাদিকের জীবনের উপর বয়ে যাওয়া কঠোর দন্ডপ্রাপ্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিল কর্টার। ভেতরে তার ভারাক্রান্ত হৃদয় চেঁচিয়ে উঠত,"হায় খোদা!"। কিন্তু বাইরে স্হির হাতে সারতে হত তার কর্মসাধনা।

১৯৯৪ সালে কার্টার "Pulitzer" পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিল শকুন দ্বারা তাড়িত একটি সুদানী শিশুর পীড়াদায়ক আলোকচিত্রের জন্যে। কিন্তু জীবনের কোন আনন্দই আর তাকে উদ্ধার করতে পারেনি বেদনার করাল গ্রাস থেকে। সে বেছে নিল আত্মহননের পথ।

চলে গেল শৈশবে যে মাঠে খেলত সেখানে। তারপর গাড়ির দূষণ নির্গমন পাইপটি ঢুকিয়ে গাড়িটা ভরে দিল কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসে। সেই বিষক্রিয়া বুকে নিয়ে ঢলে পড়ল চিরনিদ্রায়। তার সুইসাইড চিরকুটে লিখে যায়ঃ

“I’m really, really sorry. The pain of life overrides the joy to the point that joy does not exist… I am depressed… without phone… money for rent … money for child support… money for debts… money!!!… I am haunted by the vivid memories of killings and corpses and anger and pain… of starving or wounded children, of trigger-happy madmen, often police, of killer executioners… I have gone to join Ken [recently deceased colleague Ken Oosterbroek] if I am that lucky”.


https://www.aljazeera.com/indepth/features/2014/08/bring-change-rural-bangladesh-201482714349581533.html
Pixcellent Photography aims to achieve Philanthropy through Photography

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

৭টি মাস্টার কম্পজিশন যা আপনার অবশ্যই চেষ্টা করা উচিৎ একজন বিগিনার ফটোগ্রাফার হিসেবে

প্রাণী প্রেমের নামে আমাদের হত্যা করা হয়েছে - মলি (২০১৭ - ১১ জুন, ২০২০)