প্রাণী প্রেমের নামে আমাদের হত্যা করা হয়েছে - মলি (২০১৭ - ১১ জুন, ২০২০)

ছবি
গত মে মাসে (২০২০) এর শেষের দিক থেকে কি মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে, এবং এখনও হচ্ছে... ফেব্রুয়ারি মাসে আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। সেই সময়ই আমাদের বাসায় যিনি কাজ করতেন, তার ছেলের একটি সমস্যার কারণে তাকে দেশে যেতে হয়। এরপর লকডাউন এর কারণে তিনি আর ফিরে আসতে পারছিলেন না। আমার মা সিবিজি রুগী। আমার বড় বোন লন্ডনে থাকেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই অবস্থায় মা আমার খালার বাসায় থাকলেই ভালো হয়।   আমার দুটি পোষা বেড়ালের মধ্যে হুলো এবং অপরটির নাম ছিলো মলি। একা বাসায়  অসুস্থ অবস্থায় আমি ওদের দেখাশোনা করতে পারছিলাম না। করনা কালীন একা বাড়িতে অসুস্থা অবস্থায় আমার প্রচন্ড প্যানিক ও হচ্ছিলো। আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে আমাদের বাসায় যিনি কাজ করতেন, তিনি আর জীবিত ফিরে আসবেন না। রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে, দুর্ভিক্ষ হবে, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে, মানুষ তখন ঘরে ঘরে ধুকে ডাকাতি করবে। এমন একটা ধারণা অনেকেরই হয়েছিলো। প্যানিক থেকে প্রায় আমার নাক থেকে রক্ত পড়ত। দুশ্চিন্তা থেকে পেটে ব্যথা প্রচন্ড বেড়ে গিয়েছিলো। বেশী টেনশান হতো হুলো মলিকে নিয়ে। আমি ওদের ঠিক মতন দেখাশোনা করতে পারছিলাম না, ওরা যদ

মারা গেলেন বিশ্বসেরা চুম্বন আলিঙ্গনের ছবির নায়ক | Dies The Hero Of The Most Famous Kissing Picture In The World

The Kissing Sailor, George Mendonsa, seen here in a slightly different picture from the image that made Life magazine, has died. He was 95.Photograph: Victor Jorgensen/AP ,George Mendonsa, The Kissing Sailor in famous photograph, dies at 95


৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১৯ সাল, মারা গেলেন জর্জ মেনদনসা (George Mendonsa)। 

উনি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন সিদ্ধহস্ত আলোকচিত্র শিল্পী আলফ্রেড আইসেনটেডের (Alfred Eisenstaedt) ক্যামেরায় আটক হয়ে।ছবিটির নাম, "The Unconditional Surrender"।

একটা চাঞ্চল্যকর ছবি বটে। আমেরিকার টাইমস স্কয়ারে প্রকাশ্য রাজপথে এক যুবতীকে জড়িয়ে ধরে চুম্বনে শিক্ত করে তুলছেন। চরম মুহূর্তটিকে ফটোশিল্পী আলফ্রেডের কৌশলী হস্ত ক্ষেপন করে নিলেন অতি দক্ষতার সাথে। তোলপাড় শুরু হল বিশ্বময়, এ কেমন কথা, এ কেমন ছবি। কিন্তু এ ছবিটিই হয়ে উঠল আমেরিকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয়োল্লাসের জাতীয় প্রতীক হিসাবে। 

কে এই নারী, কে এই পুরুষ? ছবিতে বোঝা যাচ্ছিল না। কেবল দেখা যাচ্ছিল একটি চুম্বনের বিমূর্ত আবেদনের মূর্ত প্রতীক। 

শিল্পী আলফ্রেডও জানাতে পারলেন না কারা এরা। তবে বোঝা যাচ্ছিল লোকটি নাবিকের বেশে এবং মহিলাটি নার্সের পোশাকে। 

বিখ্যাত হবার প্রয়াসীরা ভিড় করতে শুরু করল এ ছবির মানুষগুলি তারা বলে দাবি করে। ১১ জন পুরুষ আর তিনজন নারী জোর দাবি জানালো এ ছবির নায়ক-নায়িকারা তারা বলে। সবাই, বিশেষ করে নাবিকেরা মনে করত, আহ্! এ ছবির পাত্র যদি আমি হতে পারতাম!

এদের সবার মধ্যে জর্জ মেনদনসা ছিলেন একদম নাছোড়বান্দা। তিনি দাবি করেই চলছিলেন যে ছবির লোকটি সেই, তিনি মামলা পর্যন্ত করলেন এ দাবি জানিয়ে। 

মামলায় তেমন কিছু হল না। তবে অবশেষে তার কিছু শারীরিক চিহ্ন যেমন, থ্রীডি আকৃতি মুখোচ্ছবি, বাম হাতে একটি সিস্ট, ইত্যাদি প্রমাণ করল তিনিই এই ছবির ব্যক্তিটি। 

মহিলাটি ছিলেন গ্রেটা ফ্রিডম্যান (Greta Zimmer Friedman) নামক একজন ডেনটিস্ট। ডেনটিস্ট হিসাবে তার পোশাক ছিল নার্সের পোশাকের তুল্য। আলিঙ্গঁনের সময় তারা দু’জন ছিল সম্পূর্ণ অপরিচিত। কিন্তু পরবর্তীতে তারা দু’জনে জড়িয়ে পড়লেন বন্ধুত্বের বন্ধনে। 

এই আলোড়নকারী ছবির ব্যাপারটা আসলে কি? 

তখন চলছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মিঃ
মেনদনসা, অর্থাৎ ছবির নায়ক ছিলেন ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন নৌ-বাহিনীর একজন নাবিক, জন্মসূত্রে একজন পর্তুগাল থেকে আগত মার্কিন নাগরিকের পুত্র। বেশী লেখাপড়া ম্যানডোন্সা করেনি। হাতে তুলে নিয়েছিল পিতার ব্যবসা। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগদান করেন ইউ.এস নেভিতে। 

কর্মরত অবস্থায় একদিন তিনি বোমাহত সাগরে ভাসমান ১০০জন মার্কিনীকে উদ্ধার করে নিয়ে যান নিকটস্থ হাসপাতালে, সেখানে তিনি অবলোকন করলেন কিভাবে অন্তর ঢেলে নার্সরা সেখানে সেবা করছিলেন আহত সৈনিকদের। দেখে তিনি অনুভব করেন নার্সদের প্রতি একটি গভীর মমত্ববোধ। 

যে সময়কালে ছবিটি ধারণ করা হয়, তখন ম্যানডোন্সা তার প্রেমিকা রিটা পেট্রিকে (Rita Petry) নিয়ে টাইমস স্কয়ারে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। তারা দু’জনে মিলে উপভোগ করছিলেন একটি সিনেমা। এমন সময় আসলো জাপানের আত্মসমর্পন করার খবর, অর্থাৎ মার্কিনীদের বিজয়, ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান। মুহূর্তেই জনাকীর্ণ হয়ে উঠল টাইমস স্কয়ার। ছুটে বেড়িয়ে গেলেন রাজপথে ম্যানডোন্সা ও তার প্রেমিকাও। 

সেখানেই প্রখ্যাত সাংবাদিক আলফ্রেড ধারণ করলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় উল্লাসের প্রতীক হয়ে উঠা বিখ্যাত আলোকচিত্রটি। 

 


তবে ভিন্ন মতবাদও আছে। অনেকেই মন্তব্য করলেন, এই ছবিটি হচ্ছে প্রকাশ্যে একটি যৌন বলৎকারের ছবি। কিন্তু মিস্ ফ্রিডম্যান (ছবির মহিলাটি) নিজেও এগিয়ে আসেন মেনদনসার সমর্থনে, বললেন, না, কোন খারাপ উদ্দেশ্য ভদ্রলোকের ছিল না। বরং এটা ছিল মেনদনসার উৎবেলিত বিজয়াল্লাসের একটি বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তিনি নার্সের পোশাকধারী একজনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন কারণ সেবারত নার্সদের প্রতি তার ছিল একটি গভীর মমত্ববোধ। 

তার প্রেমিকা রিটাও সেই সময় তাদের পশ্চাতে অবস্থান করছিলেন। রিটার সাথে
মেনদনসা পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ও সাত দশক কাল বিবাহিত জীবন যাপন করেন। 

২০১৯ সালের ১৮ই ফ্রেব্রুয়ারী
মেনদনসার মেয়ে শ্যারন মোলার (Sharon Molleur) জানালেন, খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জর্জ মেনদনসা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বৎসর হতে আর মাত্র দু’দিন।

Photo by Alejandro Luengo on Unsplash unsplash-logoAlejandro Luengo
সারাসোটাতে (Sarasota)বিখ্যাত WWII 'চুম্বন নাবিক' ছবির উপর ভিত্তি করে মূর্তি 

এর পরবর্তী ব্লগটি হবে "বিগিনারদের জন্য ফটোগ্রাফি: একটি সম্পূর্ণ গাইড"। 
আপডেটেড থাকতে সাবস্ক্রাইব করুন (গ্রাহক হন)।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

৭টি মাস্টার কম্পজিশন যা আপনার অবশ্যই চেষ্টা করা উচিৎ একজন বিগিনার ফটোগ্রাফার হিসেবে

প্রাণী প্রেমের নামে আমাদের হত্যা করা হয়েছে - মলি (২০১৭ - ১১ জুন, ২০২০)